কক্সবাজারে ৬০০ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা


অবৈধ পন্থায় ভোটার তালিকায় নাম ওঠানোর অভিযোগে ৬০০ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে কক্সবাজার নির্বাচন অফিস। গত ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে ইসি কর্মী জয়নাল ও গাড়ি চালক বিজয় দাশ এবং তার বোন সীমা দাশসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক দেখানো হয়েছে।

মামলায় মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে এবং বাকিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামে নির্বাচন অফিসে গিয়ে তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় নাম ওঠানোর অভিযোগে সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম নতুন বাহারছড়ার বাসিন্দা (পুরনো রোহিঙ্গা) ইউসুফ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু (৪২), মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে ইয়াছিন (৩৭), টেকনাফ নয়াপাড়া মুছনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আবুল হাশেমের ছেলে আব্দুল্লাহকে (৫৩) কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের সহায়তায় আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা স্বীকার করেন যে, কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ খোদাইবাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মৃত ওলা মিয়ার ছেলে শামসুর রহমান (৫০) ও রোহিঙ্গা ওবায়দুল্লাকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা ভোটার হয়েছেন।

মামলার বাদী শিমুল শর্মা জানান, অভিযুক্তরা চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাতনামা লোকজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ পন্থায় নানা কৌশলে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন করে আসছে। ইতোমধ্যে নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ও মো. ইয়াছিন টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এটা স্পষ্ট হওয়ার পর এই দুই রোহিঙ্গাসহ আব্দুল্লাহ নামের আরেক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, গত ১২ মে নুরু ও মো. ইয়াছিন শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের সামনে আব্দুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ ও শামসুর রহমানকে ভোটার নিবন্ধনের জন্য ১৫ হাজার টাকা দেয়। পরে তাদের ছবি তুলে ভোটার নিবন্ধনের জন্য চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে একটি কক্ষে রাখে। সেখানে আগে থেকেই আরও অনেক রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। একই পন্থায় অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। কীভাবে এসব রোহিঙ্গা ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং এর পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সিল-স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তথ্য গোপন করে ভোটার তালিকায় নাম ওঠায় রোহিঙ্গারা। একটি জালিয়াত চক্র ডিজিটাল সিস্টেমে রোহিঙ্গাদের নাম ঠিকানা এন্ট্রি করে বায়োমেট্রিক ডাটা নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনুমতিবিহীন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই কাজ করছে।

তারা অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে অবৈধভাবে নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজে সংযুক্ত ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিবন্ধনভুক্ত করে দেয় বলেও জানা যায়।

চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিসের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, দীর্ঘ তদন্তের পর এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় অফিস সহায়ক জয়নালসহ কয়েজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *