অবশেষে খুলছে নিউমার্কেট আতঙ্ক বিরাজমান

রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় দোকানপাট,বিপণি বিতানে বেচাকেনা শুরু হয়েছে।  টানা দুদিন বন্ধ থাকার পর নিউমার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট আজ খুলেছে। আজ থেকে  ঈদের বেচাকেনা  শুরু হয়েছে এবং সকাল থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় সাইন্স ল্যাবরেটরিতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান ঢাকা কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি মাহবুব আলম।
মাহবুব আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দোকানপাট খুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও স্বাভাবিকভাবে চলবে। শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। শিক্ষক ছাত্র ও ব্যবসায়ী মিলে একটি সেল গঠন করা হবে। পরবর্তী সমস্যা সমাধানে কাজ করবে এই সেল। সাংবাদিকসহ আহত সকলকে ক্ষতিপূরণ দেবে ব্যবসায়ী মালিক সমিতি।
জানা যায়, এর আগে গত দু’দিন ধরে চলা অচলবস্থা নিরসনের লক্ষে বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি (৪ জন), ব্যবসায়ী নেতারা, স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ১টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। এর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দাবি-দাওয়া তুলে ধরে কথা বলেন ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুজয় বালা ও মাসুম বিল্লাহ।
শিক্ষার্থীরদের দাবিগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার উসকানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আহত সব শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব দায়ভার নিউমার্কেট ব্যবসাযয়ী সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিতে হবে। হকারদের হামলায় নিহত কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং পুলিশ প্রশাসনকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মাকের্টে ঢাকা কলেজের সম্পদ লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।
পুলিশ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত সোমবার  রাতে ও মঙ্গলবার দিনভর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের দোকানের কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ বন্ধ হয়। এরপর বুধবার আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউমার্কেটে মূলত দুই দোকানের কর্মচারীদের দ্বন্ধ থেকে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এক দোকানের কর্মচারী তার ঢাকা কলেজের কিছু ‘বন্ধু’কে নিয়ে এসে আরেক দোকানের কর্মচারীকে মারধর করেন। পরে দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সোমবার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর সংঘর্ষ আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, শিক্ষা ভবনের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জের ধরে মার্কেটগুলো টানা দু’দিন বন্ধ থাকে। আজ  দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠক হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউমার্কেটের সকল বিপণিবিতান খুলে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ডিএমপি’র  নিউ মার্কেট জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার শরীফ মুহাম্মদ তারিকুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থী ও  ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিউমার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ফের দোকানপাট চালু করেছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *