মূল্য তালিকা থাকতে হবে প্রতিটি দোকানে

ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, খুচরা পর্যায়ে প্রত্যেকটা দোকানে মুল্য তালিকা থাকতে হবে। যে দোকানে মূল্য তালিকা থাকবে না, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে তিনি প্রত্যেক দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শনী নিশ্চিত করার স্বার্থে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে তদারকি জোরদার করার নির্দেশ দেন।
রোববার রাজধানীর কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে কাওরানবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারওয়ানবাজারে অধিকাংশ দোকানে দামের লিস্ট দেখেছি কিন্তু কিছু কিছু দোকানে দেখলাম না। আমার নির্দেশ রইলো, দোকানে যদি দামের লিস্ট না থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল এফবিসিসিআইতে ব্যবসায়ী সব নেতারা কথা দিয়ে গেছেন জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। তারা ৪৬ জনের কমিটি করেছেন, ৪৬টি পণ্য তারা নিয়ন্ত্রণ করবেন।’
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোন ঘাটতি নেই উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে প্রতিটি পণ্যের মজুদ চাহিদার তুলনায় বেশি। ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি মসলাসহ সকল পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যাট হার কমিয়ে দেওয়ার পরে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন সয়াবিন তেল এসেছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত মজুত আছে, কোনো সংকট নেই। ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশ, এই সময় যদি কেউ মানুষকে ঠকায়, বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে কোনো ছাড় দেবেন না ।
তিনি আরও বলেন, সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর থেকে যে ট্যাক্স-ভ্যাট কমিয়েছে, তার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন। মন্ত্রী জানান, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা গুরুত্বের সাথে কাজ করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে টিপু মুনশি বলেন, ‘পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিভিন্ন খুচরা বাজারে যখন যায়, তখন দূরত্ব বিবেচনায় যারা কারওয়ানবাজার থেকে নিয়ে উত্তরা বা গাজীপুরে বিক্রি করছে, পরিবহন খরচের পার্থক্য আছে; লাখ লাখ খুচরা বিক্রেতা সেখানে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। পাইকারি বাজারে যেন দামটা ঠিক করা যায়। সেটা হলে আমার ধারণা, হয়তো প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১-২ টাকা বাড়তে পারে। সে রকমই লক্ষ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা টিসিবির ট্র্যাকে শুধু ঢাকা ও বরিশাল শহরে খাবার দিচ্ছি। ১ কোটি লোকের মধ্যে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষকে দিচ্ছি গ্রাম-গঞ্জে। আমি নিজে ঠাকুরগাঁও-রংপুরে শুরু করে দিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের হিসাব প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ আছে দরিদ্রসীমার নিচে। যদি সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ধরি ১৭ কোটি, তাহলে ৩ কোটি ২০ লাখ লোক আছে দরিদ্র্রসীমার নিচে। আমরা ১ কোটি মানুষকে দিচ্ছি, একেকটি পরিবারে ৫ জন করে যদি ধরি, তাহলে কিন্তু ৫ কোটি মানুষ পাচ্ছে। সম্পূর্ণভাবে এই কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী বলেছিলাম ৫০ হাজার মানুষকে দেবো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১ কোটি মানুষকেই দিতে হবে। অর্থাৎ আমরা দরিদ্রসীমার নিচের উপরেও প্রায় ২ কোটি লোককে কাভার করছি। আমাদের এই প্রথম দেওয়া হলো, ১৫ তারিখের দিকে আবার দেওয়া হবে। তারপরও আমরা দেবো। প্রধানমন্ত্রী এই কার্ডগুলো রক্ষা করতে বলেছেন।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারের জ্যেষ্ঠ এই মন্ত্রী বলেন, পণ্য পরিবহন বা সরবরাহ কাঠামোতে চাঁদাবাজির কোন অভিযোগ পেলে আমাকে জানাবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, চাঁদাবাজির ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা যে অভিযোগ করেছেন, সে বিষয় নিয়ে শীঘ্রই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *