তাপমাত্রা বাড়ছে রজধানী ঢাকা তে বলছে গবেষকেরা

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় হিটওয়েভ বা দাবদাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আর হিটওয়েভের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

গবেষণা দলটির একজন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ফোরকাস্ট বেজড অ্যাকশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. শাজাহান বলেছেন, দাবদাহকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে এ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা দরকার।

‌‘ঢাকা শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে আর সে কারণে কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে হিটওয়েভের কারণে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে তেমনি মানুষের কর্মসময়কালও কমছে,’ বলছিলেন তিনি। 

তিনি বলেন, সম্প্রতি বজ্রপাত অনেকে বেড়ে গেছে এবং একইভাবে তাপমাত্রাও ক্রমান্বয়ে বাড়তির দিকে। সে কারণেই এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’

 

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। চলতি বছর ২৫ এপ্রিলেই ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয় এবং ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, একটি জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি ৫ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং সেটি পরপর পাঁচদিন চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বলা হয়।

তবে অনেক দেশ এটিকে নিজের মতো করেও সংজ্ঞায়িত করেছে। তবে সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ওঠলে শরীর নিজেকে ঠান্ডা করার যে প্রক্রিয়া সেটিকে বন্ধ করে দেয়। যে কারণে এর বেশি তাপমাত্রা হলে তা স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগে তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি হলে সেটিকে মৃদু হিটওয়েভ, ৩৮-৪০ ডিগ্রি হলে মধ্যম মাত্রার হিটওয়েভ, ৪০-৪২ ডিগ্রি হলে তীব্র বা মারাত্মক এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে অতি তীব্র হিটওয়েভ হিসেবে বিবেচনা করে।

সে হিসাবে বাংলাদেশে হিটওয়েভ বা দাবদাহ শুরু হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে। তবে এটা আসলে পুরোটা নির্ভর করে মানবদেহের খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ওপর।

 

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে তিনটি সময়কালে ভাগ করা হয়েছে- ঠান্ডা ও শুষ্ক অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি, মার্চ থেকে মে গরমকাল এবং জুন থেকে অক্টোবর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময়।

এ গবেষণায় ৪৪ বছরের তাপমাত্রার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয়। আবার আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের কোন কোন জায়গায় বেশ গরম অনুভূত হলেও সেটি তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের পর্যায়ে যায় না।

তবে সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় আবহাওয়া অধিদপ্তর দেখেছে যে, মধ্য মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্য হিট বা তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দাবদাহের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ে এবং দাবদাহের সময়ের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, সে সময় মৃত্যু বেড়েছে অন্তত বিশ শতাংশ। আর ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ব্যাধির প্রকোপও বেড়ে যায় ওই সময়।

 

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার মধ্যেই কিছু নির্দিষ্ট এলাকা পাওয়া গেছে, যেখানে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। রিপোর্টে এসব স্থানকে গরম দ্বীপ (হিট আইল্যান্ড) বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

এসব এলাকার মধ্য আছে – বাড্ডা, গুলশান, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গাবতলি, গোড়ান, বাসাবো, টঙ্গী, শহীদ নগর, বাবুবাজার, পোস্তগোলা, জুরাইন, হাজাারিবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কুর্মিটোলা, আজমপুর, উত্তরা, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, আদাবর, ফার্মগেট, মহাখালী, নাখালপাড়া ইত্যাদি। গড়ে এসব এলাকায় ২৯ থেকে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে, যা গরম বাড়লে দাবদাহের পর্যায়ে চলে যায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *