আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আজই দিল্লি যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। মোদির দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার ১০০ দিনের মাথায় প্রায় আড়াই বছর পর মুখোমুখী হতে চলেছেন মোদি-মমতা। আগামীকাল বুধবার বিকেলে তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফর ঘিরে মমতার কঠোর সমালোচনা ও তীর্যক মন্তব্য করতে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
রাজ্য বিজেপি মমতার সমালোচনা করে বলছে, ‘এটা আসলে সুবিধাবাদী রাজনীতির সর্বোত্তম উদাহরণ’।
পাশাপাশি রাজধানীতে গিয়ে মোদির সঙ্গে নিজে থেকেই সাক্ষাতের বিষয়টিকে নিজেকে সিবিআইয়ের কাছ থেকে বাঁচানোর মরিয়া প্রচেষ্টা বলেও কটাক্ষ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তৃণমূল নেত্রীর এই আগ্রহকে ঘিরে কটাক্ষ করে বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে লোকসভা নির্বাচনের সময় এবং তারপরেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। তিনি কখনও ফেডারেল কাঠামোর প্রতি শ্রদ্ধা রাখেননি। এমনকি তিনি এ কথাও বলেছিলেন, তিনি মনে করেন না যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদিজিকে সম্মান করা দরকার’।
তিনি বলেন, হঠাৎ কেন এবং কী কারণে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন তা একেবারেই ওপেন সিক্রেট। এর মাধ্যমে তিনি যে আসলে একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ তাও বোঝা যাচ্ছে। এটা প্রমাণিত যে তিনি তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে যে কোনো দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারেন এবং কাজ উদ্ধার হয়ে গেলেই তা ভুলে যেতে পারেন- যোগ করেন রাহুল সিনহা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির অপর এক প্রবীণ নেতার মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে এবং তার দলের নেতাদের সিবিআইয়ের খপ্পর থেকে বাঁচাতে দিল্লিতে যাচ্ছেন। কেননা বাংলার বহু কোটি চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই।
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেছে, রাজ্যের উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধিকারের মধ্যেই পড়ে।
‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের ভিত্তিহীন এই দাবি বন্ধ করা উচিত। ফেডারেল কাঠামোয় একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে। প্রস্তাবিত বৈঠকটি রাজ্যের উন্নয়নমূলক বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত’, বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা।
জানা গেছে, রাজ্যের বিভিন্ন বকেয়া বিষয় ও আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়েই নরেদ্র মোদির কাছে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের মতে, এই সময়ে মোদি-মমতা সাক্ষাৎ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটের কর্মসূচিতে যোগ দিতে মমতা একাধিকবার দিল্লি গেলেও ‘সরকারি কাজে’ দীর্ঘদিন যাননি।
গত মে মাসে মোদির শপথেও নয়। ঘোষিতভাবেই বিভিন্ন সরকারি বৈঠক তিনি এড়িয়ে গেছেন। গত জুনে নীতি আয়োগের বৈঠক বা ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে আলোচনায় কোনও কিছুতেই মমতাকে যোগ দিতে দেখা যায়নি। এমনকি, দেশে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে বলে দু’দিন আগেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, সিবিআই তদন্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। পুলিশকর্তা রাজীব কুমার রীতিমতো চাপে। সারদা, নারদ মামলায় তলব করা হচ্ছে রাজ্যের একের পর এক মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতাকে। পাশাপাশি রাজ্যের অর্থ ভাণ্ডারে টান পড়েছে। সব মিলিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক তাই রাজনৈতিকভাবেও অর্থবহ হতে পারে।