ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ডভাঙ্গা একটি সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
এই টেস্ট ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন জয়ের সেঞ্চুরি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটা উদাহরণ – বলছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মাহমুদুল হাসান জয় নিজের প্রথম ইনিংসেই ১৩৭ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।
কিন্তু রেকর্ডের খাতায় শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে না, এশিয়ার প্রেক্ষিতেই মাহমুদুল হাসান জয়ের ইনিংসটি বিশেষ।
সাকিব-মুশফিক-তামিমের পর লিটন-মিরাজ-মুস্তাফিজ এবার শরিফুল-জয়দের ব্যাচও বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়মিত হয়ে উঠছেন, এরা সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছেন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নজর কেড়েই তারা জাতীয় দলে পা দিয়েছেন, জয় আর শরিফুল ২০২০ সালের যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য।
সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আবারও বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে শতক হাঁকালেন জয়।
বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়মিত অনুসরণ করেন ক্রিকেট সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবি, তিনি বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আগে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।
তিনি বলেছেন, “এই জয় এক সময় ব্যাটিংই পেত না। পাড়ার ক্রিকেটে কেবল ফিল্ডিং করাতেন তাকে দিয়ে বড় ভাইরা।”
এখন জয়ের এমন ব্যাটিং দেখে সেই বড় ভাইরাও গর্ব করবেন বলেই মনে করেন তিনি।
চাঁদপুর থেকে উঠে এসেছেন জয়, ২০১৩ সালে চাঁদপুরে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন।
মি. রবি বলেন, “এক সময় জয়ের বাবা আবুল বারেক চাইতেন ছেলে ব্যাংকার হবেন। সেই আফসোস নিশ্চয়ই মিটে গেছে এখন।”
এমনিই দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন বলেই বিবেচিত, সাচিন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, স্টিফেন ফ্লেমিং, শিবনারায়ণ চন্দরপলের মতো ব্যাটসম্যানরা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সফল বলে বিবেচ্য।
এশিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাচিন, ভিরাট কোহলি, রাহুল দ্রাবিড়, কুমার সাঙ্গাকারা, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো ব্যাটসম্যানরা সফল হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে।
সেখানে নিজের প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকানোর পর তিনি বলেন, শুধুই উইকেটে থাকাই ছিল লক্ষ্য।
“আমার দল চেয়েছে যাতে আমি ভালো কিছু করি সেটাই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি”।
তিনি দিনশেষে উপস্থিত বাংলাদেশি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, “এখানে কোনও ম্যাজিক নেই, আমার দায়িত্ব ছিল ব্যাট করা, সেই করেছি”।
দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে শুধু না, টেস্ট ক্রিকেটের ধরনই এটা – উইকেটে থাকলে রান আসবেই, বলছেন জয়।
দল চেয়েছে দীর্ঘ সময় যাতে ব্যাট করেন তিনি, সেটাই করেছেন তিনি।
৪৪২ মিনিট ব্যাট করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়, খেলেছেন ৩৩৬ বল।
বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স এই ইনিংস দেখে বলেছেন টেস্টে বাংলাদেশের কোনও ব্যাটসম্যানের এমন ইনিংস তিনি খুব কমই দেখেছেন।
দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে সিডন্স বলেন, “জয়ের ইনিংসটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই বিশেষ কিছু।”
জয়ের ইনিংসটাকে ধৈর্য্য আর পরিকল্পনার মিশেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন মি. সিডন্স।
“যতটা জানে ঠিক ততটাই খেলেছে জয়। এখানে বাড়তি কোনও আতিশয্য ছিল না তার ইনিংসে। টেস্ট ক্রিকেটে যেভাবে সে ব্যাট করেছে, আমরা গর্বিত। টেস্টে এতো সুন্দর ইনিংস বাংলাদেশের খুব বেশি আছে কি না। আমি নিশ্চিত নই।”
বাংলাদেশের কোনও ব্যাটসম্যানই টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩০০ বল তো দূরে থাক ২০০ বলও খেলেনি এর আগে।