ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্ট এ বেশি অসুস্থতা, সেপ্টেম্বরেও থাকবে প্রকোপ

বাংলাদেশে ২০২১ সালের প্রথম আট মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পহেলা জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৯০ জন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন অগাস্ট মাসেই। এই এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৩২ জন। দেশটিতে সব মিলিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪২ জন।

ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা শহরের বাসিন্দারা। তবে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ রয়েছে।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুর এই সংক্রমণ সারা দেশের মানুষের জন্য নতুন ভীতি হিসাবে দেখা দিয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

এদিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) একটি গবেষণা শেষে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রোগীদের মধ্যে তারা ডেঙ্গুর নতুন সেরোটাইপ বা একটি ধরন শনাক্ত করেছেন।

ডেনভি-৩ নামের এই ধরনে ঢাকার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এই ধরনের কারণে রক্তের কণিকা প্লাটিলেট দ্রুত কমে যায়। কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সী বলছেন, দেশে এই ডেনভি-৩ ধরনের ডেঙ্গু ধরন আমরা প্রথম দেখতে পাই ২০১৭ সালের দিকে। তার আগে ডেঙ্গুর আরও দুইটি ধরন, ডেনভি-১ ও ২) শনাক্ত হয়েছিল। ডেনভি-১ ও ২ এর বিরুদ্ধে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই ধরনটি আগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।

”আগে কেউ ডেঙ্গুর কোন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার পর, আবার যদি এই ডেনভি-৩ ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে যান, তাহলে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়। এবারের ডেঙ্গুতে এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে,” তিনি বলছেন চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ১০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

বাংলাদেশ এই বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এর মধ্যেই ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র আগস্ট মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। সেই বছর লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই বছর শুধুমাত্র আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।

বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৭৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, যদিও সরকার তার মধ্যে ১৭৯ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু জনিত কারণে নিশ্চিত করেছে।

এর মধ্যেই হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, “দুটো মহামারি যদি একত্রে চলমান থাকে, তাহলে মানুষের জীবনের জন্য একটি প্রবল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে,”।

আবার করোনাভাইরাসের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ মিলে যাওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলেও ধরে নিচ্ছেন। ফলে জটিলতা আরও বাড়ছে।

মশা বিষয়ে জাপানের কানাজোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, ”এই বছর এপ্রিল ও মে মাস থেকেই বেশ বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা, এই তিনটা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। ফলে জুন মাস থেকেই আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে, এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি হতে পারে। এসব মিলিয়ে আমাদের ধারণা, সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবটা বেশি থাকবে।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *