বাবার ভিডিও দেখে কাঁদলেন রোনাল্ডো


স্পোর্টস ডেস্ক : মাঠ দাপিয়ে বেড়ান। কেউ তাকে আটকে রাখতে পারেনা। খেলার মাঠে তিনি অপরাজেয়। কিন্তু তিনিই বাবার ভিডিয়ো দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, সম্প্রতি ইংল্যান্ডে এক টিভিতে ইন্টারভিউ দিতে যান। সামনে ছিলেন সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গান। সেখানেই রোনাল্ডোকে তার বাবার একটি ভিডিয়ো দেখানো হয়। তারপরই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সিআর ৭।

বাবার কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, পরিবারে সবাই তাঁর আজকের সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু তাঁর বাবাকে কিছুই দেখাতে পারলেন না। এই আক্ষেপ তাঁর সারা জীবন রয়ে যাবে।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বাবা, জোস ডিনিস অ্যাভেইরো ব্রিটিশ, পর্তুগাল নাগরিক ছিলেন। পর্তুগালের এক পুরসভায় বাগান রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন। সেই সঙ্গে পার্ট টাইম একটি কাজও করতেন। স্থানীয় ফুটবল ক্লাব অ্যানডোরিনহা স্পোর্টস ক্লাবে ‘কিট ম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন। একদিন তিনি ছেলেকে ক্লাবের মাঠে নিয়ে যান। পরিচয় করান ফুটবল খেলার সঙ্গে। সেই ছেলে আজ বিশ্ব ফুটবলে সেরাদের অন্যতম। কিন্তু ফুটবল বিশ্বে ছেলের এই সাফল্যের কোনও কিছুই দেখে যেতে পারেননি ডিনিস অ্যাভেইরো।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। মদ্যপানের কারণে লিভারের সমস্যাতে রোনাল্ডোর বাবা জোস ডিনিস অ্যাভেইরো মারা যান। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। সালটা ছিল ২০০৫, রোনাল্ডো তখন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলছেন। বাবার মৃত্যু তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। যে কারণে বাবার মৃত্যুর পর প্রতীজ্ঞা করেন জীবনে কোনও দিন মদ ছোঁবেন না।

২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলার পর রিয়াল মাদ্রিদে চলে যান সিআর ৭। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পরই একের পর এক খেতাব আসতে থাকে রোনাল্ডোর ঝুলিতে। ২০১৮ সালে যোগ দেন জুভেন্তাসে। ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত অজস্র পুরস্কার, খেতাব জিতে নিয়েছেন রোনাল্ডো। পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, পাঁচ বার ব্যালন ডি’অর উঠেছে তাঁর হাতে। দেশের ফুটবল দলকে নেতৃত্বে দিয়েছেন। কিন্তু এই সবের কিছুই দেখে যেতে পারেননি তাঁর বাবা।

ব্রিটিশ টিভি ইন্টারভিউতে নানা প্রশ্ন আলাপচারিতার মাঝে তাকে তার বাবার ভিডিয়োটি দেখানো হয়। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে রোনাল্ডোর বাবা, জোস ডিনিস অ্যাভেইরো ছেলের সম্পর্কে গর্ব করছেন। ভবিষ্যতে ছেলের সাফল্য কামনা করছেন। ছেলে সফল হয়েছেন, বিশ্বের সেরা ফুটবলারের মুকুট উঠে মাথায়। কিন্তু যার হাত ধরে ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় সেই বাবা এই সব কিছু দেখে যেতে পারলেন না। এই আক্ষেপই অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল।

মাঠে কঠিন রক্ষণ ভেঙে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দিলেও বাবার ভিডিয়ো সামনে আসতেই সেই কাঠিন্য ভেঙে পড়ল। এক শিশুর মতো কেঁদে ফেললেন ক্যামেরার সামনেই।

আবেগমথিত গলায় বললেন, এই ভিডিয়ো তিনি আগে দেখেননি। এই ছবিগুলি তার পরিবারে সদস্যদের দেখাতে চান। তবে রোনাল্ডো বলেন, বাবা মত্ত থাকতেন। তাঁদের মধ্যে স্বাভাবিক কথোপকথন খুব একটা হত না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *